শুধু মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাল সনদধারী অনেক শিক্ষক কাজ করছেন। বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষক ভুয়া সনদ নিয়ে কাজ করছেন। টাকার বিনিময়ে ভুয়া বিএডি, সিএনইডি সার্টিফিকেট তৈরি করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্কেলে বেতন নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাই এবার জল সনদে বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের গ্রেফতারের উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ইতিমধ্যে পাঁচজন ভুয়া শিক্ষককে শনাক্ত করা হয়েছে।
তবে ভুয়া শিক্ষক শনাক্ত হলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এক বছরের বেশি সময় লাগছে বলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এদিকে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কর্মকর্তারা। এ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে চান না তারা। তাদের দাবি, ভুয়া শিক্ষক ধরা পড়ার পর তারা প্রাণ ভয়ে রয়েছেন।
২০২২ সালের ৬ অক্টোবর দৈনিক শিক্ষা ডটকমে ‘ভুয়া প্রাথমিক শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশের জোরালো দাবি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ভুয়া শিক্ষক শনাক্তের উদ্যোগ নেয় অধিদপ্তর।
অধিদপ্তর সূত্র আমাদের জানায়, ইতোমধ্যে পাঁচজন ভুয়া শিক্ষককে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে তাদের BED এবং SEinEd সার্টিফিকেট যাচাই করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এগুলো সবই সরকারি প্রতিষ্ঠান। যাচাইয়ে পাঁচটি নকল পাওয়া গেছে। এরা পাঁচজনই ময়মনসিংহ বিভাগের শিক্ষক। প্রাথমিকভাবে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সনদ যাচাই করা হবে। ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা ও জামালপুর জেলার সরকারি শিক্ষকদের BED, C.Ed সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি, স্কুলের নাম, জাতীয়করণের তারিখ, BED প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, C.Ed, C.Ed সার্টিফিকেট, ভর্তির তারিখ সহ , পাসের বছর, গ্রেড, সার্টিফিকেটের বৈধতা সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতামত। পাঠাতে বলেছেন।
গত ২২ মার্চ চার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে এ তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য উপজেলার শিক্ষকদের সনদও পর্যায়ক্রমে যাচাই করা হবে। শুধু সরকারি নয়, রাজস্ব খাতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সনদও যাচাই করা হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৩ সালে এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষক উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড, সিডি ও সিএড সার্টিফিকেট নিয়েছেন, কেউ কেউ ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়েছেন এবং প্রশিক্ষণ স্কেলের বেতন ভাতা পাচ্ছেন। এতে প্রাথমিক শিক্ষার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া সারাদেশে জাল সনদ দেওয়ার বিভিন্ন সিন্ডিকেট রয়েছে বলেও জানা গেছে।
অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে প্রতিবেদন না লিখতে অনুরোধ করেন। এ বিষয়ে খবর দিলে তাদের জীবন ধ্বংস হতে পারে বলে জানান তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, “ভুয়া শিক্ষক খুঁজে বের করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনেক সময় লাগে।” আমরা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাঁচজন শিক্ষকের জাল সার্টিফিকেট শনাক্ত করেছি। কিন্তু ২০২৩ সালের মার্চেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। বিন্যাস প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। আবার সনদপত্র যাচাই করা হয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে। তাতেও সময় লাগে। আমরা আশা করছি মে মাসের মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের চিত্র পাব।
তিনি আরও বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে সব বিভাগের শিক্ষকদের সনদ যাচাই করব। তাদের সনদ জাল হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।