শিক্ষা ব্যবস্থাপনা কি? বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

শিক্ষা ব্যবস্থাপনা কি? বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

শিক্ষা ব্যবস্থাপনা কি? বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন আজকের পোস্ট থেকেঃ

শিক্ষা ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, অধীন দপ্তর/সংস্থাসমূহ বাংলাদেশে শিক্ষা সংক্রান্ত সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করে থাকে।

শিক্ষার বিভিন্ন ধারা:

প্রথামিক শিক্ষা, সাধারণ ও মাদ্‌রাসা এ দুই  প্রধান ধারায় পরিচালিত। কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা সাধারণ, কারিগরি ও মাদ্‌রাসা এ তিনটি ধারায় পরিচালিত। উচ্চ শিক্ষাও তিনটি ধারায় পরিচালিত। সাধারণ (বিজ্ঞান ও ফলিত বিজ্ঞান, কলা, ব্যবসায় শিক্ষা ও সামাজিক বিজ্ঞান), মাদ্‌রাসা এবং টেকনোলজি শিক্ষা। টেকনোলজি শিক্ষার মধ্যে কৃষি, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল, টেক্সটাইল, লেদার এবং আইসিটি অন্তর্ভুক্ত। সাধারণ শিক্ষার মত মাদ্‌রাসা শিক্ষায়ও প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে একই ধরনের বিষয় পড়ানো হয় তবে ধর্মীয় শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। 

শিক্ষা ব্যবস্থাপনা কি? বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

শিক্ষা মন্ত্রণালয়:

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ গঠন করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ শিক্ষা সংক্রান্ত নীতি, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচি (প্রাথমিক শিক্ষা স্তর পরবর্তী উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা), প্রণয়ন, পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষন ও মূল্যায়ন করে থাকে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালনা ও পরিদর্শন কার্যাদি সম্পন্ন করে থাকে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর:

অধিদপ্তর প্রধান মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা এবং বিশেষ শ্রেণির শিক্ষার প্রশাসনিক, ব্যবস্থাপনা এবং নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে স্থানীয় অফিস এ বিষয়ে সহায়তা করে থাকে।

বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন:

এই সংস্থা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্পোরেট বডি হিসেবে কাজ করে। এর চেয়ারম্যান শিক্ষামন্ত্রী এবং মহাসচিব শিক্ষা সচিব । কমিশন সচিবালয়ের প্রধান হিসেবে একজন সচিব রয়েছেন।

জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম):

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এই একাডেমি বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। এছাড়াও জ্যেষ্ঠ শিক্ষা প্রশাসকদের এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এই একাডেমির প্রধান একজন মহাপরিচালক। 

নায়েম এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদুদ্ধ দক্ষ, যোগ্য ও সৃজনশীল শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসক গড়ে তোলার অনন্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।

লক্ষ্য

মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষা প্রশাসন, শিখন-শেখানো কার্যক্রম ও শিক্ষা গবেষণা পরিচালনায় এবং শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সকল ক্ষেত্রে দক্ষ, পেশাদার, মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসক গড়ে তোলা।

নায়েমের উদ্দেশ্যসমূহ

  • সাধারণ উদ্দেশ্য

নায়েমের সাধারণ উদ্দেশ্য হচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা স্তরের শিক্ষক উন্নয়ন ও মানসম্মত ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে প্রাথমিক – পরব্তী স্তরে গুণগতমান সম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা।

  • বিশেষ উদ্দেশ্যসমূহ
    1. শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠান সমূহকে পেশাগত ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করা|
    2. প্রাথমিক পরবর্তী শিক্ষা উপ-স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দক্ষতা ও কার্যকারিতার উন্নয়ন করা।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি):

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এটি একটি স্বায়ত্বশায়িত প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুসত্মকের কারিক্যুলাম উন্নয়ন, প্রকাশনা ও বিতরনের দায়িত্ব পালন করে থাকে।

NCTB-এর কার্যক্রম

“জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্য বই বোর্ড অধ্যাদেশ, 1983” অনুযায়ী NCTB-এর কার্যক্রম:

  • স্কুলের পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যক্রম পরীক্ষা করা এবং তাতে সংশোধনের প্রস্তাব করা
  • কারিকুলাম, সিলেবাস এবং পাঠ্যপুস্তকের কার্যকারিতার প্রাক-পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন
  • পাঠ্যপুস্তকের পাণ্ডুলিপি তৈরির ব্যবস্থা করুন
  • পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ, বিতরণ ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা
  • পাঠ্যপুস্তক, পুরস্কারের বই, লাইব্রেরি এবং রেফারেন্স বইয়ের অনুমোদন
  • অনুদান ও অনুদান প্রদানের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কাজে উৎসাহিত করা
  • দরিদ্র ও যোগ্য শিক্ষার্থীদের বই দান
  • সময়ে সময়ে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য কার্য সম্পাদন করা

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস):

এই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের এবং পর্যায়ের শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে থাকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সংস্থা শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান সংরক্ষণ এবং প্রকাশ করে থাকে এবং মন্ত্রণালয়ের ইএমআইএস অংগ হিসেবে কাজ করে। এছাড়া আরআইএনএসএসিএ এর সমন্বয়ক হিসেবেও কাজ করে।

READ MORE: EMIS সফটওয়্যারে ইনস্টিটিউট ম্যানেজমেন্ট IMS মডিউল এ  তথ্য প্রদান

পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ):

এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান পরিচালক এবং ইহা মাধ্যমিক পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানসম্মত শিক্ষা উন্নয়নের নিমিত্ত পরিদর্শন ও নিরীক্ষার দায়িত্ব পালন করে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি):

এই প্রতিষ্ঠান পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি এবং তত্ত্ববাধনের দায়িত্ব পালন করে থাকে।

শিক্ষা বোর্ড:

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ০৯টি বোর্ড জে.এস.সি., এস.এস.সি., এইচ.এস.সি. পর্যায়ের পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করে থাকে। এছাড়াও এই বোর্ডসমূহ বেসরকারি ও প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে থাকে।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এন.টি.আর.সি.এ.):

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উত্তীর্ণ প্রার্থী নিয়োগের লক্ষ্যে নিয়োগ পরীক্ষা পরিচালনার জন্য ২০০৫ সালে ফেব্রুয়ারিতে এই প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করা হয়। এন.টি.আর.সি.এ. পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত বেসরকারি মাধ্যমিক ও ডিগ্রী, উচ্চতর ডিগ্রী পর্যায়ের মানসম্মত শিক্ষক নির্বাচন করে থাকে।

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট

অর্থের অভাবে শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত দরিদ্র, মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার নিমিত্তে দেশের সকল স্কুল/কলেজ/মাদ্রাসা/বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করে থাকে।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড

এমপিওভূক্ত অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসরকালীন সময়ের সুবিধা প্রদান করে থাকে।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের কল্যাণ সুবিধা প্রদান করে থাকে।

বাংলাদেশের শিক্ষা কাঠামো

শিক্ষা কাঠামো কি? 

বাংলাদেশের শিক্ষা প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক এই তিনটি প্রধান ধাপে শিক্ষা ব্যবস্থাপনা বিভক্ত রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা পরিধি ৫ বছর,যা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বৃদ্ধির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন, মাধ্যমিক শিক্ষার পরিধি ৭ বছরকে তিনটি উপধাপে বিভক্ত যথা নিম্নমাধ্যমিক ৩ বছর, মাধ্যমিক ২বছর এবং উচ্চমাধ্যমিক ২ বছর। প্রাথমিকে প্রবেশের বয়স ৬ বছর, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের বয়স যথাক্রমে ১১-১৩, ১৪-১৫ এবং ১৬-১৭ বছর। ডিগ্রি পর্যায়ের সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি, প্রকৌশলী, কৃষি, ব্যবসায় শিক্ষাকে উচ্চ মাধ্যমিক অনুসরণ করা হয় এবং মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষা ৫-৬ বছর।

সাধারণ শিক্ষায় উচ্চ মাধ্যমিককে অনুসৃত কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা পাস/অনার্স ডিগ্রি কোর্স (৪ বছর) দিয়ে শুরু হয়। মাস্টার্স কোর্স ডিগ্রী অনার্স ডিগ্রী প্রাপ্তদের জন্য ০১ বছর এবং ডিগ্রি পাস শিক্ষার্থীদের জন্য ০২ বছর। এছাড়া কারিগরির আওতায় উচ্চ শিক্ষা, উচ্চ মাধ্যমিকের পর থেকে শুরু হয়। প্রকৌশল, ব্যবসা, চিকিৎসা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হল কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রধান ক্ষেত্র। চিকিৎসা শিক্ষা ছাড়া প্রতিটি কোর্স ৫ বছর।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *