বিশিষ্ট শিক্ষাবিধ কর্তৃক প্রদত্ত শিক্ষাক্রম সম্পর্কে ধারণা এবং বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাক্রম যোগ্যতাভিত্তিক পরিমার্জনের ক্রমবিকাশ।
- শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড আর পদ্ধতিগত শিক্ষার ভিত্তি হলো শিক্ষাক্রম ।
- শিক্ষাবিদগণ বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাক্রমের ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
শিক্ষাক্রমের সংজ্ঞা
টাইলার (Ralph Tyler -949) শিক্ষাক্রমের সংজ্ঞা সরাসরিভাবে প্রদান না করে চারটি প্রশ্নের মাধ্যমে একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, যেমন:
- শিক্ষা কী কী উদ্দেশ্য অর্জন করবে,
- কী কী শিখন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিদ্যালয় এসব উদ্দেশ্য অর্জন করবে,
- কীভাবে শিখন অভিজ্ঞতাগুলো সংগঠন ও বিন্যাস করা যাবে,
- উদ্দেশ্যগুলো অর্জিত হয়েছে কিনা তা কীভাবে যাচাই করা যাবে।
আরো পড়ুনঃ সহকারী শিক্ষকদের জ্যৈষ্ঠতা নির্ধারণ নীতিমালা। Primary Teacher Gradation
হুইলার (Wheeler, 1967): শিক্ষাক্রম বলতে শিক্ষার উদ্দেশ্য, শিখন অভিজ্ঞতা নির্বাচন, বিষয়বস্তু নির্বাচন, বিষয়বস্তু শনাক্তকরণ, বিষয়বস্ত সংগঠন, মূল্যায়ন ইত্যাদির একটি বৃত্তাকার গতিশীল প্রক্রিয়াকে বুঝিয়েছেন।
কার (Professor Kerr, 1968): বিদ্যালয় কর্তৃক পরিকল্পিত ও পরিচালিত যাবতীয় শিখন যা বিদ্যালয় এবং বিদ্যালয়ের বাইরে দলগত বা ব্যক্তিগতভাবে সম্পন্ন করা হয়, তাই শিক্ষাক্রম ।
সেলর ও আলেকজান্ডার (১৯৮০): শ্রেণিকক্ষে, খেলার মাঠে বা বিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের শিখনকে প্রভাবন্বিত করার জন্য বিদ্যালয়ে প্রচেষ্ঠার সমষ্টিই শিক্ষাক্রম।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়-যুক্তরাজ্য (১৯৮২): শিক্ষায়তনে শিক্ষা গ্রহণকালে বিভিন্ন রকম সুবিন্যস্ত ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে সামাজিকভাবে জ্ঞান, দক্ষতা এবং মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভজি বিকাশের সুযোগ দেওয়া হয় তাই শিক্ষাক্রম ।
প্রাথমিক শিক্ষাক্রম ২০২১ শিক্ষাক্রম পরিমার্জন
ডেলর কমিশন রিপোর্ট অনুযায়ী জীবনব্যাপী শিক্ষা চারটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত, স্তন্তগুলো হচ্ছে –
- জানার জন্য শিখন (Learn to know),
- কাজের জন্য শিখন (Learn to do),
- মিলেমিশে বসবাস করার জন্য শিখন (Learn to live together) এবং
- বিকশিত হয়ে উঠার জন্য শিখন (Learn to be)
এই চারটি স্তভের উপর ভিত্তি করে শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন করা হয়ে থাকে । শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের একটি নিয়মিত ও গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও নবায়ন একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এই উদ্দেশ্যে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ১৯৮৬ সালে একটি দীর্ঘ মেয়াদী ও বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে । এই সময়ে উদ্দেশ্যভিত্তিক শিক্ষাক্রমের পরিবর্তে প্রাথমিক স্তরের জন্য যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রণয়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়। এই শিক্ষাক্রম ১৯৮৮ সালে চূড়ান্ত করা হয়।
দেশব্যাপী ১০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক ট্রাই-আউট পরিচালনার নিমিত্ত শ্রেণিকক্ষে ব্যবহারের মাধ্যমে উপযোগিতা যাচাই করা হয়। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সালে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে দেশের সকল বিদ্যালয়ে প্রবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০২ সালে এবং সর্বশেষ ২০১১ সালে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। সময়ের পরিক্রমায় বৈশ্বিক পরির্বতনের প্রেক্ষিতে বর্তমান শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় ।
জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল
প্রাথমিক শিক্ষাক্রম ২০২৩ সম্পূর্ণ নতুন একটি শিক্ষাক্রম। বর্তমান বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে চলার জন্য প্রাথমিক শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা জরুরী।