নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের করণীয়

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের করণীয়

উপর্যুক্ত বিষয়ের আলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্টদের সংযুক্ত নির্দেশনা /করণীয় যথাযথভাবে প্রতিপালন করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো ।

মাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার্থী অভিভাবক শিক্ষক প্রতিষ্ঠান প্রধান ও মাঠ পর্যায়ে কর্মরত জেলা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিম্নোক্ত নির্দেশনা সমূহ যথাযথভাবে অনুষ্ঠান-পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।  আসুন জেনে নেই নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ বাস্তবায়নে করনীয় বিষয় সম্পর্কে।

নতুন শিক্ষাক্রম সংক্রান্ত নির্দেশনা করণীয় 

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্টদের করণীয়ঃ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্টদের নিম্নোক্ত নির্দেশনা / করণীয় যথাযথভাবে প্রতিপালন করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো ।

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের করণীয়

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের করণীয়

২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর  ষষ্ঠ সপ্তম শ্রেণীর জন্য নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ চালু করেছে। এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের যে সকল ভূমিকা পালন করতে হবে তা হচ্ছেঃ

  1. নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাওয়া এবং শ্রেণিকার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা ।
  2. সঠিক সময়ে পড়াশুনা খাওয়া করা, ঘুমানো এবং মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলায় অংশ নেয়া ।
  3. এনসিটিবি কর্তৃক প্রণীত পাঠ্যপুস্তক ও সম্পূরক পঠন সামগ্রী পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ।
  4. নতুনকে গ্রহণ করার উপযুক্ত মানসিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করা ।
  5. সরকার প্রদত্ত শিখন সামগ্রী যথাসময়ে সংগ্রহ করা ।
  6. শ্রেণিকক্ষে এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরে Activity based learning কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করা ।
  7. বিদ্যালয় শিক্ষা সংশ্লিষ্টবিভিন্নসমস্যা নিয়ে শ্রেণিশিক্ষকের সাথে আলাপ করা ।
  8. অবসর সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সৃজনশীল বই পড়ার অভ্যাস গড়ে
  9. তোলা ।
  10. শিখন সংশ্লিষ্ট যে কোনো বিষয় নিয়ে অভিভাবকের ( মা/বাবা ) সাথে কথা বলে পরামর্শ গ্রহণ করা ।
  11. নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে শিখনের সর্বক্ষেত্রেঅংশগ্রহণ করা ।
  12. দলগত কাজে সহপাঠীদের মূল্যায়নে নিরপেক্ষতা, সততা এবং নৈতিকতা বজায় রাখা ।
  13. স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য গঠিত ক্লাবসমুহের মধ্যে অন্তত দুটি ক্লাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করা ।

আরো পড়ুনঃ nctb muktopaath gov bd ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা ২০২৩

নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ বাস্তবায়নে অভিভাবকদের করণীয়

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদের ভূমিকা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর অভিভাবকদের যে সকল ভূমিকা পালন করতে হবে তার একটি নির্দেশনা জারি করেছে। অভিভাবকদের যে সকল নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার উপর জোর দেয়া হয়েছে তা হলোঃ

  • সন্তানদের / শিক্ষার্থীদেরকে নিজের এবং বাড়ির ছোট ছোট কাজগুলো করানোর বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করা ।
  • সন্তানদের / শিক্ষার্থীদের সময় দেওয়া , তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করা ।
  • সন্তানদেরকে / শিক্ষার্থীদেরকে ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া এবং ভুল / অপ্রয়োজনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত।
  • কারিকুলাম বিস্তরণে অভিভাবকদের যে দায়িত্ব তা সঠিক ভাবে পালন করা ।
  • সন্তানদের / শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা ।
  • সন্তানদের / শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট /কোচিং এ নিরুৎসাহিত করা ।
  • সন্তানদের / শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়ে নিরপেক্ষতা , সততা এবং নৈতিকতা বজায় রাখা ।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকর্তৃক আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থাকা ।

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের করণীয়

 শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ভূমিকার পাশাপাশি শ্রেণী শিক্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য। শিক্ষক,অভিভাবক এবং শিক্ষার্থী এই তিনজনের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কিছু নির্দেশনা জারি করেছে যা  নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

  • টিচার্স গাইড ও পাঠ সংশ্লিষ্টউপকরণসহ শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করা ।
  • গতানুগতিক শিক্ষক কেন্দ্রিক পদ্ধতি পরিহার করে সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করা । প্রকৃতপক্ষে প্রচলিত ভূমিকার উর্ধ্বে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক হয়ে উঠবেন সহ -শিক্ষার্থী।
  • হোম ভিজিট ও উঠান বৈঠক করা ।
  • প্রকল্প ভিত্তিক কাজ ও অনুসদ্ধান মূলক কাজে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ,ডায়রি ব্যবহারে উৎসাহিত করা ।
  • শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য সহয়তামূলক একীভূত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করবেন যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখনের উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।
  • শ্রেণি শিক্ষক যে সকল সমস্যা চিহ্নিত করবেন , তা নিয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রধান শিক্ষকের সাথে সাপ্তাহিক সভায় আলোচনা করা ও সমস্যা সমাধানের কৌশল নির্ধারণ করা ।
  • বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা ।
  • Slow Learner /Advance Learner চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী শিখন কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং
  • তাদের শিখন পরিস্থিতি উন্নয়নে কার্যকর কৌশল প্রয়োগ।
  • মূল্যায়নের মূলনীতি অনুসরন পূর্বক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন যোগ্যতার মূল্যায়ন নিশ্চিতকরণ ও মূল্যায়নের ধারাবাহিক রেকর্ড সংরক্ষণ ।
  • শিক্ষার্থীদের দলগত কাজসহ সামগ্রিক মূল্যায়নে নিরপেক্ষতা , সততা এবং নৈতিকতা বজায় রাখা ।
  • শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক শিখন পরিবেশ তৈরি করতে শিক্ষককে মূলত Facilitator এর ভূমিকা পালন।
  • শ্রেণি কক্ষে শিক্ষক -শিক্ষার্থীর মধ্যে কারিকুলাম সংশ্লিষ্ট বাস্তব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আদান প্রদানের একটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা ।

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের করণীয়

একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রতিষ্ঠানের সকল বিষয়ের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন। প্রদান তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মাঝে সমন্বয় তৈরীর মাধ্যমে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানদের করণীয়ঃ

  • এনসিটিবি কর্তৃক প্রদত্ত রুটিন / গাইড লাইন অনুযায়ী প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকদের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম নিশ্চিত করা ।
  • শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং শিখন কার্যক্রম পরিচালনায় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা ।
  • শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করা ।
  • শিক্ষাক্রমে নির্দেশিত কৌশল ও পদ্ধতি শ্রেণি পাঠদানে অনুসৃত হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করা ।
  • শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়ন শেষে শিক্ষার্থীদের হাতে তৈরী বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে অভিভাবক ,শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ছোট পরিসরে শিক্ষা উপকরণ মেলার আয়োজন করা ।
  • শিক্ষার্থী,অভিভাবক , শিক্ষকসহ অংশিজনের সক্রিয় সমর্থন ও অংশগ্রহণের জন্য সমন্বিত গণযোগাযোগ কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা ।
  • বছরে ০৩ টি অভিভাবক সমাবেশ নিশ্চিত করা এবং অভিভাবকদের সুবিধাজনক গ্রুপ করে শ্রেণিকার্যক্রম দেখার ব্যবস্থা করা ।
  • যে সকল শিক্ষকের লেখার অভ্যাস রয়েছে তাদের লিখনীতে নতুন কারিকুলামের পজিটিভ দিক তুলে ধরার জন্য উৎসাহ প্রদানকরা ।
  • প্রতি ০৩ মাসে কমপক্ষে একবার শিক্ষকদের In house প্রশিক্ষণের আয়োজন করা ।
  • প্রতিষ্ঠানে নতুন কারিকুলামে অন্তর্ভূক্তসব বিষয়ই যথাসম্ভব বোঝার চেষ্টাকরা । এতে তিনি আন্তঃ বিষয় সম্পর্কটি ( Inter Subject Relation ) বুঝতে ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারবেন ।
  • প্রাত্যহিক সমাবেশে নীতি বাক্যের সাথে কারিকুলাম বাস্তবায়নে শপথ নিশ্চিত করা ।
  • প্রতিষ্ঠানের ফটকে দৃষ্টিগোচর স্থানে কারিকুলাম বাস্তবায়নের শ্লোগান /স্বপ্ন/ প্রত্যয় লেখা।
  • নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিখন -শেখানোকার্যক্রম নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা ও শিক্ষকগণকে পরামর্শ দেয়া ।
  • শিক্ষার্থীদের দ্বারা কম্পিউটার ক্লাব,ডিবেট ক্লাব,বিজ্ঞান ক্লাব, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, গ্রিনক্লাব/ পরিবেশ ক্লাব, সাংস্কৃতিক ক্লাব , ক্রীড়াক্লাব, হেলথ ক্লাব গঠন ও সক্রিয় রাখায় উৎসাহিত করা ।

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে উপজেলা /থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পর্যায়ে করণীয়

  • পাঠ্যপুস্তক , শিক্ষক সহায়িকা এবং শিক্ষা উপকরণ যথাসময়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ ।
  • শিক্ষকগণ পাঠ সংশ্লিষ্ট উপকরণ ও এনসিটিবি প্রদত্ত রুটিন / গাইড লাইন অনুযায়ী শিখন -শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করছেন কিনা তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা ।
  • শিক্ষার্থীদের উপকরণ মেলার আয়োজনে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সহযোগিতা করা এবং নির্বাচিত সেরাদের পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থাকরা ।
  • উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে শিক্ষা বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা যেন নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে খরচ হয় সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে আলোচনা করা ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *